ড. সাইফুল্লাহ তাঁর ল্যাবরেটরি কক্ষে আঙ্গুলের চাপ দিয়ে প্রবেশ করেন। একই ল্যাবরেটরির অন্য কক্ষে প্রবেশ করার সময় সেন্সরের দিকে তাকানোর ফলে দরজা খুলে গেল। একদিন তিনি বন্ধু চিকিৎসকের নিকট গালের আঁচিল অপারেশনের জন্য গেলেন। বন্ধু তাঁকে স্বল্প সময়ে: ২০°C তাপমাত্রায় রক্তপাতহীন অপারেশন করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি তার ল্যাবরেটরিতে ফিরে এসে কাজ শুরু করলেন।
ক. ভিডিও কনফারেন্সিং কী?
খ. ঘরে বসে ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করার পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. ড. সাইফুল্লাহর চিকিৎসায় চিকিৎসক কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রযুক্তিগুলো মূলত একই মতামত দাও।
উত্তর:
ক. অডিও ভিজুয়াল পদ্ধতিতে বিশ্বের যেকোনো শহর ও স্থানে অবস্থান করে টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি যেমন- কম্পিউটার, স্মার্টফোন, টেলিভিশন ব্যবহার করে সভা কার্যক্রম পরিচালনা করার কৌশলই হলো। ভিডিও কনফারেন্সিং।
খ. ঘরে বসে ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করার পদ্ধতিটি হলো টেলিমেডিসিন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থাই হলো টেলিমেডিসিন। এ পদ্ধতিতে মোবাইলের মাধ্যমে দূর থেকে রোগীরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট হতে অতিদ্রুত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে৷ এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা ঘরে বসেই এ পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা সেবা পেতে পারে। এছাড়া, ইন্টারনেট ও ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করে এক দেশের চিকিৎসক
গ. উদ্দীপকে ড. সাইফুল্লাহর চিকিৎসায় চিকিৎসক ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছিলেন। নিচে ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো
ক্রায়োসার্জারি এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, যা অত্যাধিক শীতল তাপমাত্রা প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত রোগাক্রান্ত টিস্যু/ত্বক কোষ ধ্বংস করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতির চিকিৎসায় প্রথমেই সিম্যুলেটেড সফটওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত কোষগুলোর (যেমন— আঁচিল ইত্যাদি) অবস্থান ও সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত কোষটিতে আল্ট্রা থিন সুচযুক্ত ক্রায়োপ্রোব প্রবেশ করিয়ে নির্ধারিত ক্রায়োজেনিক গ্যাস প্রয়োগ করা হয়। তাপমাত্রা অত্যধিক হ্রাসের ফলে (–৪১ থেকে ১৯৬ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড) নির্বাচিত টিস্যুটিতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঐ নিম্নতম তাপমাত্রায় রক্ত ও অক্সিজেন সঞ্চালন সম্ভব না। হওয়ার দরুণ রোগাক্রান্ত টিস্যুর ক্ষতিসাধন হয়। ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসায় রোগাক্রান্ত টিস্যুর ধরন অনুযায়ী এবং নির্দিষ্ট শীতলতায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্যাস যেমন- তরল নাইট্রোজেন, আর্গন, অক্সিজেন বা তরল কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়৷ উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করেই ড. সাইফুল্লাহর গালের আঁচিলের চিকিৎসা করা হয়েছিল। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় ক্রায়োসার্জারি অনেক সাশ্রয়ী এবং সময় কম লাগে। এ পদ্ধতিতে ব্যথা, রক্তপাত অথবা অপারেশনজনিত কাটা-ছেঁড়ারও জটিলতা নেই।
ঘ. উদ্দীপকে দরজা দিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিং পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছে, যা বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তির অন্তর্গত। অন্যদিকে চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি হলো ক্রায়োসার্জারি। তথ্য প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রবণতার অন্তর্গত এ প্রযুক্তিদ্বয়ের ব্যবহারক্ষেত্র ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্যগত ও কার্যকরণ দিক থেকে এ প্রযুক্তিগুলো মূলত একই । নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
বর্তমান বিশ্বে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রযুক্তির ভূমিকা বর্ণনাতীত। প্রযুক্তি হলো জ্ঞান, যন্ত্র এবং তন্ত্রের ব্যবহার যা আমরা আমাদের জীবন সহজ করার স্বার্থে ব্যবহার করছি। বায়োমেট্রিক্স ও ক্রায়োসার্জারি এরকম দুটি প্রযুক্তি, যা আমাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। মানুষের দৈহিক গঠন বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য পরিমাপের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করার জন্য বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়৷ অন্যদিকে ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে অত্যাধিক শীতল তাপমাত্রা প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত রোগাক্রান্ত টিস্যু/ত্বক কোষ ধ্বংস করা হয়। ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন সাশ্রয়ী হচ্ছে তেমনি চিকিৎসায় সময়ও কম লাগছে। আধুনিক প্রযুক্তির অবদান ক্রায়োসার্জারির ব্যবহারের ফলে অপারেশনজনিত কাটা-ছেঁড়ার জটিলতা ছাড়া চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বায়োমেট্রিক্স ও ক্রায়োসার্জারি প্রযুক্তি দুটো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই বলা যায়, ব্যবহার ক্ষেত্রের ভিন্নতা থাকলেও বায়োমেট্রিক্স ও ক্রায়োসার্জারি প্রযুক্তিগুলো মূলত একই ।
No comments yet. Be the first to comment!